লাখো মানুষের ঢল সেই সাথে বৈরী আবহাওয়া গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। তার মধ্যদিয়েই শেষ হলো বগুড়ার মহাস্থানগড়ে শেষ বৈশাখী উৎসব। ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে অতীত সভ্যতার লীলাভূমিতে শায়িত আছেন উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত ওলীয়ে কামেল হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখীর (রা.)। এই মহাস্থানগড়ে ধর্ম প্রচারের জন্য এসেছিলেন হয়রত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রা.)। কথিত আছে পুন্ড্রনগরের হিন্দু রাজা পশুরামের সঙ্গে হযরত শাহ সুলতান বলখী (রা.) এর যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধে হযরত শাহ সুলতার মাহমুদ বলখী (রা.) বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে তার শাহাদৎ বরণের পর মহাস্থানে মাজার স্থাপিত হয়। তার বিজয় ও স্মৃতি স্মরণে প্রতি বছরের মতো এবারও বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার (১১মে) মাজার জিয়ারত এবং বৈশাখী মেলা বসেছিল। একসময় এই মেলাকে গাঁজার মেলা হিসাবে আখ্যায়িত করা হলেও কালক্রমে তা অনেকটাই কমতে দেখা গেছে৷ আগে দেশ-বিদেশ থেকে গাঁজাসেবীরা আসতেন গাঁজা উৎসবে যোগ দিতে। এবারও মহাস্থানগড়ে দূর-দূরান্ত থেকে মাজার ভক্ত আসেকানেরা এসে ছিলেন তাদের মিলন মেলা পূর্ণ করতে। মেলায় ধর্মপ্রাণ মুসলমান, সাধু-সন্ন্যাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এসেছে। এদিকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাজার এলাকার বাহিরে জটাধারী সন্ন্যাসীরা তাদের প্রার্থনার অংশ হিসেবে গাঁজা সেবনের আসরও বসেছিল। বিশেষ করে মেলা উপলক্ষে বসেছে বিভিন্ন ধরনের দোকান। সব মিলিয়ে মহাস্থান ও আশেপাশের এলাকায় মানুষের ঢল নেমেছিল চোখে পড়ার মত। এ মেলায় যেমন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগী ও জিকির আজগরে মেতে ওঠেন। অন্যদিকে আধ্যাত্মিক সাধনা বিশ্বাসী জটাধারী সাধু, সন্ন্যাসী, বাউল-সুফি ও তরিকা অনুসারীরা মারফতী জগতের গান বাজনা করে সারা রাত আসর জমাতে অবস্থান নিয়েছে মাজারের উত্তরপাশে দুধপাথর, মানকালী ও পাশে হযরত বোরহান উদ্দিন(রঃ) এর মাজার এর পশ্চিমে আমবাগান ও উত্তরপাশের আবাসিক এলাকা জুড়ে বসেছে এক একটি আস্তানা। হযরত বোরহান উদ্দিন(রঃ) এর মাজার ও পশ্চিমে মানকালী নামক চত্বরে সামিয়ানা টাঙিয়ে মারফতি গানের আসর বসিয়েছে বাউল সাধকেরা। এদিকে মাজার সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠ জুড়েই বসেছে হরেক রকম অস্থায়ী দোকানপাট। খাবারের হোটেল, মিষ্টি ও পণ্যসামগ্রীসহ বস্ত্র বিতান, নাগর দোলা, মোটরসাইকেল খেলা, জাদুর খেলা ইত্যাদি। মেলায় আগতরা বাড়ি ফেরার পথে নানা সামগ্রী কেনাকাটা করেন। মহাস্থানে এসে অনেকেই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় তাদের মানতকৃত দুধ বিশাল একটি প্রত্ন পাথরে ঢেলে দেন। মাজারে দানের টাকা- পয়সা ও খাবার পাওয়ার আশায় অনেক ফকির-মিসকিনও জড়ো হয়েছিল। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় প্রশাসনের ছিল কঠোর ভূমিকা। আইনশৃঙ্খলা বিহিনীর ৫০২জন সিভিল ও পোশাকধারী কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করে ছিলেন। বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে মাজারের বেশ কিছু এলাকায় বসানো হয়েছিল সিসি ক্যামেরা। মহাস্থান হযরত শাহ সুলতানের মাজারের প্রধান ফটকে দর্শনার্থীকে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দ্বারা তল্লাশীর মাধ্যমে মেলায় প্রবেশ করানো হয়েছিল। তবে রাতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির কারনে মেলায় আগতদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। বিপাকে পড়েছে স্থানীয় কটকটি ব্যবসায়ী সহ অসংখ্য দোকানী।